HONS. COMPULSORY ENGLISH

Search This Blog

Friday, December 23, 2016

গুগল চশমার নবজন্মের পেছনে ঢাকার কোম্পানি-সৌজন্যে ড্যাফোডিল ইংলিশ কোচিং, দৌলতপুর খুলনা--০১৭১৭-০৮৭১৯৯/০১৯১৭-৪৬১৬০৫




রোগীর দিকে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস না করেই চিকিৎসক জেনে যাচ্ছেন তার রোগবালাইয়ের অতীত ইতিহাসজানছেন রোগীর সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফলরক্তচাপ, রক্তে চিনির পরিমাণ, রোগী এর আগে কী কী ওষুধ খেয়েছে ইত্যাদিএ তথ্য ভেসে উঠছে চিকিৎসকের চোখে লাগানো এক বিশেষ ধরনের চশমার কাচেচশমাটির নাম গুগল-গ্লাস
এ এক অভিনব সেবাবলা হচ্ছে, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার চেহারা পাল্টে দিতে শুরু করেছে এই সেবাআর এর পেছনে বুদ্ধি ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে অগমেডিক্স নামে যে কোম্পানি, সেটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইয়ান শাকিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানবাংলাদেশেও প্রতিষ্ঠানটির একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আছেতা ছাড়া এই প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নের কাজটি হয়েছে ঢাকায়আর একে ঘিরে ভবিষ্যতে যে কর্মযজ্ঞের আয়োজন চলছে, সেটির প্রধান কেন্দ্র হতে যাচ্ছে ঢাকাএ জন্য কোম্পানিটিতে নতুন বিপুল পরিমাণ অর্থ লগ্নি করতে শুরু করেছে সিলিকন ভ্যালির বিনিয়োগকারীরাইতিমধ্যে ১ কোটি ৯২ লাখ ডলার অর্থ লগ্নি করেছে ডিসিএম ভেঞ্চারস নামে একটি বড় মার্কিন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শিগগিরই সাত হাজার তরুণ দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ গড়ে তুলবে এই কোম্পানি
শুরুতে এর সেবাগ্রহীতারা হচ্ছেন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক তবে যেসব দেশে রোগীর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যভান্ডার অনলাইনে সংরক্ষণ ও শেয়ার করা হয়, সেসব দেশে শিগগিরই এই সেবা ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে
গুগল-গ্লাস হলো টেক-জায়ান্ট গুগলের তৈরি করা একটি স্মার্ট চশমা, যার ভেতর দিয়ে তাকালে বাইরের দৃশ্যের পাশাপাশি দরকারি নানা রকম তথ্য ভেসে ওঠে কাচের পর্দায়চশমাটি ইন্টারনেট বা ক্লাউডের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য দেয়
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব
প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা দেশগুলোয় রোগীদের সব মেডিকেল তথ্য রাখা হচ্ছে কম্পিউটারে, ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ডে (ইএইচআর)কিন্তু দেখা যায়, রোগী দেখার সময় একটা বড় অংশজুড়ে চিকিৎসককে ব্যস্ত থাকতে হয় কম্পিউটার ঘাঁটাঘাঁটিতেআগের রেকর্ড দেখা, ডিজিটাল ডেটা দেখা, পরীক্ষণের ফলাফল দেখা এবং নতুন তথ্য-উপাত্ত ভুক্তি দেওয়ায় নেহাত কম সময় যায় নাআমেরিকার মতো যেসব দেশে স্বাস্থ্য উপাত্ত রাখা বাধ্যতামূলক, সেখানে রোগী দেখার সময়ের ২৫ শতাংশই চলে যায় কম্পিউটারে
এর একটি চৌকস সমাধান নিয়ে এসেছে অগমেডিক্সচিকিৎসকদের সামনে থেকে কম্পিউটার সরিয়ে ফেলেছে তারাগুগল-গ্লাসকে ভিত্তি করে একটি নতুন সেবা অ্যাপ্লিকেশন (সফটওয়্যার) বানিয়েছে তারা
গুগল-গ্লাস নামক বিশেষ চশমাটি ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকেএর মাধ্যমে রোগীকে পরীক্ষা করার সময় চিকিৎসক দূরদেশে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা তাঁর লিপিকারের’ (স্ক্রাইবার) সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেনলিপিকারের কম্পিউটার যুক্ত থাকে রোগীর তথ্যভান্ডারের সঙ্গে একজন লিপিকার রোগীর যাবতীয় রেকর্ডই কেবল দেখছেন না, বরং তা তৎক্ষণাৎ (রিয়েল টাইম) তাঁর চিকিৎসককে জানিয়ে দিতে পারছেনতথ্যগুলো ভেসে উঠছে রোগীকে পরীক্ষায় ব্যস্ত চিকিৎসকের চশমার পর্দায়আবার চিকিৎসক রোগী দেখে যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেগুলো তিনি মুখে বলামাত্র ওই চশমার মধ্য দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে লিপিকারের কাছেলিপিকার চার্ট-নোট (রোগীসংক্রান্ত) লিপিবদ্ধ করছেনচশমাটি এখানে একটি দ্বিমুখী যোগাযোগের মাধ্যমএ কারণে এটি প্রচলিত মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে
আমেরিকার প্রথম সারির দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ‘এর মাধ্যমে একজন চিকিৎসক একই সময়ে আগের চেয়ে বেশি রোগী দেখতে পারেনতাঁর দৈনিক দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় বাঁচেসবচেয়ে বড় কথা, চিকিৎসকেরা রোগী দেখার মূল কাজে তাঁর পুরো সময় ব্যয় করতে পারছেন
যেভাবে বাংলাদেশ যুক্ত
যাঁদের হাতে এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে, সেই অগমেডিক্সের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতার একজন ইয়ান শাকিলতাঁর বাবা কাজী শাকিল হলেন ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনের ভাই এবং মা দিয়ানে মেলোন একজন আমেরিকানডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হওয়ার পর ইয়ান শাকিল ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেনকয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পর ২০১২ সালে পেলু ট্র্যান নামে আরেক আমেরিকান তরুণের সঙ্গে মিলে শাকিল প্রতিষ্ঠা করেন স্টার্টআপ কোম্পানি অগমেডিক্স
আমেরিকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা হলেও বাবার কারণে ছোটবেলা থেকে নিয়মিত বাংলাদেশে এসেছেন শাকিলবাংলাদেশের সঙ্গে নাড়ির টানের কারণে এ দেশের তরুণদের কাজে লাগানোর চিন্তাও এসেছেতাই গুগল চশমার সঙ্গে যুক্ত এই অ্যাপ্লিকেশন তৈরির কাজটি তিনি শুরু করেন ঢাকাতেই এবং নিবন্ধন করেন অগমেডিক্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড নামের সম্পূর্ণ বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান, যার মালিকানা শতভাগ সিলিকন ভ্যালির অগমেডিক্সেরবর্তমানে গুগল-গ্লাসের চিকিৎসকদের জন্য এই লিপিসেবাটি দেওয়া হয় ভারত, ডমিনিকান রিপাবলিক, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ থেকেএরই মধ্যে আমেরিকার সহস্রাধিক চিকিৎসক এই সেবা ব্যবহার করছেন মাসে দেড় থেকে চার হাজার ডলারের বিনিময়ে
ঢাকায় অগমেডিক্স
ডিসেম্বর শাকিলের সঙ্গে কথা বলার জন্য হাজির হলাম ঢাকার পান্থপথের অগমেডিক্স কার্যালয়েসেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন অগমেডিক্স বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদুল হকশাকিল বললেন, সিলিকন ভ্যালিতে তাঁদের অফিস থাকলেও গুগল চশমার এই অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মূল কাজটি হয়েছে ঢাকাতেই এবং এটির বিকাশের কাজও এখানে হচ্ছে
বাংলাদেশি সফটওয়্যার প্রকৌশলী ও প্রোগ্রামারদের প্রশংসা করে শাকিল বলেন, ‘এঁদের অনেকেই গুগল-ফেসবুক বা এ রকম বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহজে যুক্ত হতে পারেনকিন্তু আমরা কৃতজ্ঞ যে তাঁরা আমাদের মতো স্টার্টআপের সঙ্গে কাজ করছেনআমরাও তাঁদের অনেককে কোম্পানির শেয়ার দিচ্ছি
অগমেডিক্সের ঢাকার সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা যে কাজটি করেছেন, বাণিজ্য বিষয়ক আমেরিকান বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফাস্ট কোম্পানির ভাষায় সেটি হলো গুগল-গ্লাসকে দ্বিতীয় জীবন দেওয়াআর এই উদ্ভাবনী কাজের জন্য ফাস্ট কোম্পানি ২০১৬ সালে অগমেডিক্সকে স্বাস্থ্যসেবা খাতের সবচেয়ে উদ্ভাবনী কোম্পানি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে
অগমেডিক্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা ইয়ান শাকিল ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক এই স্টার্টআপ কোম্পানি
বাংলাদেশে এই কার্যক্রম চালানোর ইচ্ছে তাঁর কেন হলো, এই প্রশ্নের জবাবে হেসে দিয়ে শাকিল তাঁর পিতৃপরিচয় তুলে ধরেনতারপর বাংলাদেশের এক বিরাট যুবসম্প্রদায়ের কথা তুলে ধরে বলেন, ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে এঁদের বিশ্বমানের কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা মোটেই কঠিন নয়এ জন্য শাকিল তরুণদের ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ওপর জোর দেন
অগমেডিক্সে বিনিয়োগ
৮ ডিসেম্বর নতুন করে ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার (১৯২ কোটি টাকা) বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে এই কোম্পানিনতুনভাবে অগমেডিক্সে বিনিয়োগ করেছে মার্কিন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাককেসন ভেঞ্চার ও অরবিমেডএই কোম্পানিগুলো আমেরিকায় চিকিৎসা খাতে প্রথম সারির বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানএর আগে রেডমাইল প্রুপ, ডিসিএম ভেঞ্চার, এমারজেন্স ক্যাপিটালসহ আমেরিকার বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক প্রায় ছয় কোটি ডলার (প্রায় ৪৭০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করেছে অগমেডিক্সেবাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে যে সম্ভাবনা ইয়ান দেখেন, তার প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল ডিসিএম ভেঞ্চার কোম্পানির অংশীদার পেটে মোরানের কথায় ডিসিএম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে
এই প্রতিবেদকের কাছে পাঠানো এক বার্তা পেটে মোরান জানালেন, ১৯৯০ সালের দিকে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা চীনের ইন্টারনেট উদ্যোক্তাদের মধ্যে যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখেছিলেন, ঠিক তেমনটি এখন বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে দেখছেন তাঁরাতিনি বলেছেন, ‘১৯৯৯ সালের দিকে আমরা চীনের ইন্টারনেট উদ্যোক্তাদের পেছনে বিনিয়োগ করেছি এবং তাঁরা অনেকেই এখনকার শীর্ষ কোম্পানিগুলো গঠন করেছেনআমরা এখন সমমাত্রায় উদ্দীপ্ত যে অগমেডিক্সের মতো কোম্পানির পেছনে আমরা বিনিয়োগ করছি, যারা কার্যত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিতবিপুল তরুণ জনগোষ্ঠী, ক্রমাগত শক্তিশালী হওয়া শিক্ষাব্যবস্থা, সংহত তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামো এবং কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানএসবই বাংলাদেশকে নব্বইয়ের দশকের তথ্যপ্রযুক্তিতে চীনের সমান্তরাল অবস্থানকেই তুলে ধরছেআর সে জন্য আমরা মনে করছি এশিয়ায় বিনিয়োগের এক সম্ভাবনাময় দেশ হলো বাংলাদেশ
নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কেবল বাংলাদেশে তাদের সেবার পরিধি পাঁচ থেকে সাত হাজার জনে উন্নীত করতে চান ইয়ানঢাকায় অগমেডিক্স কর্মকর্তা আহমেদুল হক বললেন, এরই মধ্যে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ বাংলাদেশি তরুণদের স্ক্রাইবসেবায় দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার কর্মকাণ্ডে সহায়তা দিচ্ছেশাকিল বললেন, বিশ্বের জন্য বাংলাদেশ থেকে স্ক্রাইবসেবা দেওয়ার কাজটার সবটুকু তাঁরা একা করতে চান নাএ জন্য অংশীদারদেরও তিনি সঙ্গে নেবেনঅগমেডিক্সের ক্লাউড ও সিস্টেম ব্যবহার করে বাংলাদেশি অন্য কোম্পানিও এই সেবা চালু করতে পারবে
ইয়ান শাকিলের ইচ্ছা বছর খানেকের মধ্যে বাংলাদেশে তাঁর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের একটি সভা ঢাকায় আয়োজন করা, যেখানে সিলিকন ভ্যালির বনেদি বিনিযোগকারীরা উপস্থিত থাকবেনতাঁর ধারণা, অবকাঠামোগত সুবিধার চেয়ে বাংলাদেশের তরুণদের স্বীকৃত মেধার কথা ঠিকমতো তুলে ধরা উচিততাতে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নব্বইয়ের দশকের চীনের মতো বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারবে

No comments:

Post a Comment