HONS. COMPULSORY ENGLISH

Search This Blog

Friday, December 23, 2016

বাবার ফাঁসি ছিল ‘বীরের মৃত্যু’-সৌজন্যে ড্যাফোডিল ইংলিশ কোচিং, দৌলতপুর খুলনা—০১৭১৭-০৮৭১৯৯/০১৯১৭-৪৬১৬০৫


২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বরপবিত্র ঈদুল আজহার সকালজর্ডানের রাজধানী আম্মানের একটি বাড়িটেলিভিশনের সামনে বসে আছেন ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বড় মেয়ে রাগাদ হোসেন, তার বোন ও তাদের ছেলেমেয়েরাপর্দার দৃশ্য দেখে তারা সবাই কেঁদে উঠলেনমুখোশ পরা কয়েকজন লোক সাদ্দাম হোসেনকে ধাক্কা দিয়ে ফাঁসিকাষ্ঠে নিয়ে যাচ্ছেনসেখানে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবেসাদ্দাম হোসেনের চোখেমুখে বিষাদের চিহ্ন নেইচোখ থেকে একফোঁটা অশ্রুও ঝরছে নাফাঁসির আগে তিনি জমটুপি পরতে অস্বীকার করলেনমুহূর্তেই গলায় পরানো হলো ফাঁসির রশিসে সময়ই সম্প্রচার বন্ধ করে দিল ইরাকিয়া টেলিভিশনতার কয়েক ঘণ্টার পরেই মোবাইলে ধারণ করা ফাঁসি কার্যকরের একটি ভিডিও ফুটেজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েতবে সেই ভিডিও কখনই দেখেননি সাদ্দামকন্যা রাগাদ
বাবার ফাঁসির ১০ বছর পর মুখ খুলেছেন রাগাদ সাদ্দাম হোসেনপ্রথমবারের মতো মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন অনুভূতি আম্মান থেকে টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘ফাঁসি কার্যকরের ওই ভিডিও আমি কখনই দেখিনিদেখতেও চাইনিবাবাকে মেরে ফেলার পদ্ধতিটা অনেক কুৎসিত ও বেদনাদায়ক

কিন্তু ওটা সম্মানিত মৃত্যুওই মৃত্যুটা আমার কাছে গর্বেরআমার ছেলেমেয়ে, আমার বোন ও তাদের ছেলেমেয়ে এবং যারা তাকে ভালোবাসে সবার কাছে ওটা বীরের মৃত্যু১৯৭৯ সাল থেকে ইরাক শাসন করছিলেন সাদ্দাম হোসেন২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত ও গ্রেফতার করা হয়তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাক আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেনফাঁসি কার্যকরের পর বুশ বলেছিলেন, এর মাধ্যমে ইরাকি জনগণের ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে এবং সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে কিন্তু সেখান থেকে ইরাকে অস্থিতিশীলতা ও সংঘাত আরও বেড়েই গেছেচরমপন্থী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে১০ বছর ধরে চলছে নৈরাজ্য

সাদ্দামকন্যা রাগাদ তার দেশের এ নৈরাজ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন তবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে তিনি আশাবাদীতিনি বলেন, ‘এই লোকটি মাত্র নেতৃত্বে এসেছেনআপাতদৃষ্টিতে যা মনে হচ্ছে, তার উচ্চ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা রয়েছে এবং তিনি পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নরাগাদ বলেন, পূববর্তী প্রেসিডেন্টরা ইরাকনীতি ও তার বাবার ক্ষেত্রে যে ভুল করেছেন, ট্রাম্প সেগুলো সম্পর্কে সচেতন

নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইরাকযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেনযদিও ইরাক যুদ্ধের আগে ও পরে তিনি বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এর পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলেছেনসেসময় তিনি সাদ্দামকে খারাপ লোকবলেছেনআবারসন্ত্রাসীদেরদমনে তার প্রশংসা করেছেন

রাগাদ মনে করেন, তার বাবার শাসনে ইরাকে স্থিতিশীলতা ছিল এবং আজ তার বাবা বেঁচে থাকলে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা অন্য কোনো চরমপন্থী গ্র সক্রিয় হতে পারত নাতবে পশ্চিমাপন্থী অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সাদ্দামের ফাঁসির মাধ্যমে দেশটিতে তার নিষ্ঠুর স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছেবিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্যমতে, দেশটিতে সাদ্দামবিরোধীদের ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে বর্বর নির্যাতন চালানো হতো এবং বিরোধী যে কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানো হতো সাদ্দামের দুই পুত্র উদয় ও কুসে এসব নৃশংসতার হোতা ছিলেন২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তারা নিহত হন

রাগাদ বলেন, ‘আমাদের পরিবার সম্পর্কে যা বলা হয়, তার সবটাই সত্যি না হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্বরতা প্রকাশ পেয়েছেকিন্তু আমি তা সমর্থন করি নাআর ইরাক এমন একটা দেশ যেখানে শাসনকার্য চালানো বেশ কঠিনজনগণ এখন তা উপলব্ধি করতে পারছে

সাদ্দামের শাসনামলে বড় দুটি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে১৯৮২ সালে দুজেই গণহত্যা এবং ওই দশকে কুর্দিদের ওপর আক্রমণরাগাদ জানান, সে সময় তিনি কিশোরী ছিলেনওইসব ঘটনা সম্পর্কে খুব বেশি মনে করতে পারেন না

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক কাজকর্মে পরিবারের মেয়েদের কোনো ভূমিকা ছিল না আমার যখন ২০ বছর বয়স, তখন আমার পাঁচ ছেলেমেয়েতাদের লালন-পালন করি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশ ট্রান্সেলেশন ডিগ্রির জন্য ক্লাস করিআমি খুব পড়ুয়া ছিলাম আর পড়ালেখাতেই বেশিরভাগ সময় ব্যয় হতো

রাগাদ আরও জানান, তার বাবার শাসনামলে দেশজুড়ে স্যাটেলাইট ডিশ নিষিদ্ধ থাকায় দেশবিদেশের খবর বেশি জানার সুযোগ ছিল না

কেমন ছিল বাবার সঙ্গে সম্পর্ক?

১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় রাগাদ হোসেনেরস্বামী সামরিক বাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হোসেন কামাল, যিনি দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু গবেষণা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেনরাগাদের বোন রানারও বিয়ে হয় কামালের ভাই আরেক সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গেএই দুই ভাই তাদের স্ত্রীদের নিয়ে ১৯৯৫ সালে পালিয়ে জর্ডানে আশ্রয় নিয়েছিলেন

জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর লেখা বইয়ের তথ্য অনুযায়ী সাদ্দামের বড় ছেলে উদয়ের সঙ্গে কামালের সংঘাত ছিলউদয় মনে করতেন, কামাল পশ্চিমাদের সহায়তা করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র কামালকে ইরাকের নেতা বানাবে

কামালেরা পালিয়ে যাওয়ার এক বছরের কম সময়ের মধ্যে সাদ্দাম হোসেন তাদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইরাকে ফিরলে তাদের ক্ষমা করে দেয়া হবেকিন্তু দেশে ফিরলেই সাদ্দাম তাদের তার মেয়েদের তালাক দেয়ার নির্দেশ দেনআর কিছুদিন পরেই সাদ্দামের বাহিনী তাদের দুজনকে হত্যা করে

এ কারণে সাদ্দামের সঙ্গে রাগাদ ও তার বোনের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ হলে দেশের স্বার্থে পরিবারের সবাই ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার প্রত্যয় নেনযুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বিমান হামলা হয়েছিল সাদ্দাম হোসেনের ফার্ম হাউসেতখন মেয়েদের জর্ডানের রাজপরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনিতখন থেকে আম্মানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন তারাইরাকের পরিস্থিতি ভালো হলে তাদের দেশে ফেরার ইচ্ছা রয়েছে

No comments:

Post a Comment