HONS. COMPULSORY ENGLISH

Search This Blog

Tuesday, January 3, 2017

অদম্য ছালিমার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প-সৌজন্যে ড্যাফোডিল ইংলিশ কোচিং, দৌলতপুর খুলনা—০১৭১৭-০৮৭১৯৯/০১৯১৭-৪৬১৬০৫



 

সংসারে দারুণ অভাবএক বেলা খাবার জুটলে দুই বেলা উপোস থাকতে হয়তবে স্কুলে সব পরীক্ষায় প্রথম হনসামনে এসএসসি পরীক্ষাএর মধ্যেই দরিদ্র মা-বাবা জোর করে বিয়ে দেন তাঁকেকোলে সন্তান আসেএদিকে যৌতুকের দাবিতে শুরু হয় নির্যাতন
একসময় ঘুরে দাঁড়ান তিনিছাড়েন সংসার-সন্তানঅদম্য ইচ্ছা আর মনের জোরে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেনতিন বছর পর আবার এসএসসি পরীক্ষা দেনসেই মেয়েটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেনছালিমা বেগম এখন এলাকায় প্রেরণার নাম, জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক নারীর উদাহরণপেয়েছেন জয়িতার সম্মান
ছালিমা বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ভৈষারপাড় গ্রামেছালিমা শুধু নিজেকে বদলাননি, এলাকার স্কুল-কলেজ আর গ্রামে গ্রামে ঘুরে নিজের জীবনসংগ্রামের কথা বলে মানুষকে সচেতন করেনবাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার
কষ্টের জীবন
ভৈষারপাড় গ্রামে ছালিমাদের ছোট একটি ভাঙাচোরা মাটির ঘরবাবা রহিছ উদ্দিন মারা গেছেন ২০১২ সালেমা ছকিনা বেগমচার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ছালিমা তৃতীয় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছেছোট বোন হাজেরা বেগম এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে ফরম পূরণের টাকা এখনো জোগাড় হয়নিঘরে থাকা একমাত্র গরুটি বিক্রি করে সেই টাকায় ছালিমা ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়েএকমাত্র ভাই শাহ আলম দিনমজুর
স্বপ্নভঙ্গ
ছালিমা বেগম ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় ভালোপ্রাথমিকে বৃত্তি পেয়েছেন২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নবম শ্রেণির পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই মা-বাবা তাঁর বিয়ে ঠিক করেনএতে রাজি না হওয়ায় মারধর করা হয়বিয়ের পর বাবার বাড়িতে থাকবেন এবং পড়াশোনা করবেনএই শর্তে বিয়ে হয় ছালিমারকিন্তু বিয়ের দিনই স্বামী তাঁকে নিয়ে যানপরে আর স্কুলে ফিরতে দেওয়া হয়নি তাঁকেএকসময় যৌতুকের দাবিতে স্বামী তাঁকে শারীরিক নির্যাতন শুরু করেনএর মধ্যেই তিনি এক কন্যাসন্তানের মা হনভাবেন, এখন হয়তো নির্যাতন কমবেকিন্তু নির্যাতন আরও বাড়েএকদিন রাগে-ক্ষোভে স্বামী-সন্তান ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন তিনি
ঘুরে দাঁড়ানো
ছালিমার জীবনজুড়ে তখন হতাশা২০১২ সালের মাঝামাঝি একদিন স্কুলে যান, এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা বলেনপরীক্ষার নিবন্ধনের কাজ প্রায় শেষতারপরও প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে নিবন্ধন করানছালিমা এসএসসি পরীক্ষায় স্কুলের সবার চেয়ে ভালো ফল করেনএরপর ভর্তি হন মতিউর রহমান কলেজে২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করেনবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে টাকার সমস্যায় পড়েন তিনিতখন ঘরে থাকা একটি গরু বিক্রি করে সেই টাকায় ভর্তি হন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েএখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট৶বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রীছালিমা এ বছর সুনামগঞ্জ জেলা পর্যায়ে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা নারীহিসেবে পেয়েছেন জয়িতার পুরস্কার
যাঁদের পাশে পেয়েছেন
স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা তাঁকে বিনা বেতনে পড়িয়েছেন২০১৩ সালে ১ হাজার ২০০ টাকা বেতনে পদক্ষেপ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা তাদের বৈকালিক স্কুলে ছালিমাকে শিক্ষিকার চাকরি দেয়দুই বছর এই চাকরি করেন তিনিবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন চলতি বছরের মে মাস থেকে লেখাপড়ার জন্য জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন
তাঁরা যা বলেন
মঙ্গলকাটা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, ছালিমার জীবনসংগ্রামের কথা শুনে স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রেরণা পায়স্থানীয় গোদীগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রব বলেন, ‘ছালিমাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি সে এখন নিজেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষকে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সচেতন করছেভৈষারপাড় গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস আক্তার বলেন, ‘ছালিমার কথা সবাই জানে এখন এলাকায় আর বাল্যবিয়ে হয় না
মায়ের কান্না, ভাইয়ের অসহায়ত্ব
মেয়ের কথা জানতে চাইলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন ছকিনা বেগমবলেন, ‘মেয়েটার জীবন শেষ কইরা দিছিলামকত কষ্ট করছে মেয়েটাকী করব, অভাবের কারণে তখন আমরার মাথা ঠিক আছিল নাভাই শাহ আলমের মনে বড় কষ্টবোনটা সিলেটে থাকেন টাকাপয়সা দিতে পারেন নাবাড়িতে এলে ভালোমতো খাওয়াতে পারেন নাকিতা খরতাম খইন, আমরাই খাইয়া না-খাইয়া দিন খাটাইচোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন শাহ আলম
তবে এত সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার নন ছালিমাতিনি এখন পড়ার পাশাপাশি বাল্যবিবাহকে লাল কার্ড দেখানকাজ করে যেতে চান মানুষের জন্য

No comments:

Post a Comment