ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ছাত্র
রাজনীতির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্মান ও সমর্থন ক্রমান্বয়ে হ্রাস
পাচ্ছে। এ
অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্র রাজনীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে
সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গতকাল শনিবার দুপুরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে
৮০জন কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৪টি স্বর্ণপদক, ৬১জনকে
পিএইচডি
এবং ৪৩জনকে এমফিল ডিগ্রিসহ ১৭ হাজার ৮শ’ ৭৫জন
গ্র্যাজুয়েটকে সনদ প্রদান করা হয়।
লিখিত
বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে
অপরের পরিপূরক। তাই গণতন্ত্রের
ভিতকে মজবুত করতে হলে দেশে সত্ ও যোগ্য
নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আর সেই নেতৃত্ব তৈরি হবে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির
হালচাল দেখে মনে হয় এখানে আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি
বা গোষ্ঠী স্বার্থের প্রাধান্য বেশি। কিছু ক্ষেত্রে অছাত্ররাই ছাত্র
রাজনীতির নেতৃত্ব দেয়। ভবিষ্যত্ নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ডাকসু
নির্বাচন ইজ মাস্ট’। এটা না হলে ভবিষ্যত্ নেতৃত্বে শূন্যতা সৃষ্টি
হবে।
লিখিত
বক্তব্যের বাইরে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাবর্তনে
আসলাম। যাদেরকে
সার্টিফিকেট দিচ্ছি তাদের চেহারা কিছুই দেখছি না। একেবারে
অন্ধকার। আসলে
কোনো বক্তা যদি বক্তব্য দেয় অডিয়েন্সের চেহারা দেখে বুঝা
যায় তার বক্তব্য গ্রহণ করছে না রিজেক্ট করছে। এখানে কিছু বোঝার উপায় নেই। কিছুই আমি দেখি না। আর আমাদের এখানে এত বেশি ফ্লাড
লাইট দেওয়া হয়েছে মনে হয় আমাদেরকে একটু বেশি বেশি
দেখা যায়। এটা
হলো আলো আর আঁধারের একটা খেলা।
তিনি
বলেন,
আমি লিখিত বক্তব্য একটা আনছি এটা প্রায় শেষ
হয়ে গেছে। এর
বাইরেও আমি কিছু বলতে চাই। ‘আমার
নিজের কাছে অবাক লাগে কারণ আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
চ্যান্সেলর। ১৯৬১
সালে আমি মেট্রিক পাস করছি এবং মেট্রিক
থার্ড ডিভিশন। আর
আইএ পাস করেছি এক সাবজেক্টে রেফার্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
যখন ভর্তি হতে আসলাম তখন ভর্তি হওয়া তো দূরের
কথা ভর্তির ফরমও আমাকে দেওয়া হলো না। তখন বাধ্য হয়ে আমার নিজ জেলা
দয়াল গুরুর কৃপায় গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হই’।
বিভিন্ন
আন্দোলন সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশ নিতাম। এ জন্য প্রায় ঢাকা আসতে হতো এবং
বিভিন্ন হলে রাত্রি যাপন করতাম। তখনকার এমন কোনো হল নাই যে হলের
মধ্যে ঢুকি নাই বা থাকি নাই। অবশ্য রোকেয়া হলে ঢুকি নাই থাকিও
নাই। সুযোগ
ছিল না। তবে
রোকেয়া হলের আশ- পাশে ঘোরাঘুরি কম করছি না।
বন্ধু-বান্ধবের
সমাবর্তনের কথায় নিজেরও সমাবর্তনের খায়েশ
জাগতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বন্ধু-বান্ধব যারা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো তারা কনভোকেশন ক্যাপ-গাউন পরতো। আমাদের কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। তবে সমাবর্তনে আমাদের ডাকা হতো
না। যারা
অনার্স-মাস্টার্সে ছিল, তাদের ডাকা হতো। কিন্তু আল্লাহর কি লীলা
বুঝলাম না,
যে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হইতে পারলাম না, সেই ইউনিভার্সিটিতে
আমি চ্যান্সেলর হইয়া আসছি। শুধু এই ইউনিভার্সিটির না। বাংলাদেশে যতগুলো
পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে সবগুলোর আমি চ্যান্সেলর।’
অনুষ্ঠানে
রাষ্ট্রপতি কানাডার ওয়েস্টার্ন ওন্টারিও
ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. অমিত চাকমার
হাতে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ ডিগ্রি
তুলে দেন।
সমাবর্তন
বক্তা প্রফেসর ড. অমিত চাকমা বলেন, মাতৃভূমির
সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়নি কিন্তু পারিবারিকভাবে
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার আবেগমাখা সম্পর্ক। টমার্স জেফারসনের
উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মোমবাতি থেকে কেউ আলো নিলে যেমন মোমবাতির
আলো কমবে
না, তেমনি ব্যক্তি থেকেও কেউ জ্ঞান
নিলে সে জ্ঞান কমবে না।
অমিত
চাকমা আরও বলেন, শাস্ত্র জ্ঞান অর্জনই শিক্ষার লক্ষ
নয়। শিক্ষার
মাধ্যমে মনের জানালা খোলা এবং বিকশিত করাই শিক্ষার আসল উদ্দেশ। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি
বাড়ানোর উপদেশ দিয়ে তিনি বলেন, সমাবর্তন
জ্ঞান চর্চার সমাপ্তি নয়, এটা একটা মাইলফলক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ মহান
মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, মার্চ
মাস
এলেই আমরা গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ফিরে যায়। ফরাসি দার্শনিক আর্দ্রে
মারলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে করা মন্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে মৃত ছাত্র-ছাত্রীর
সংখ্যা জীবিত ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে
অনেক বেশি।
সমাবর্তন
অনুষ্ঠানে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরিন আহমাদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। মঞ্চে ছিলেন সহ-উপাচার্য
(প্রশাসন) অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ
অধ্যাপক কামাল উদ্দীনসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা।
এর
আগে বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আচার্য কার্জন
হলের সামনে থেকে শোভাযাত্রা করে সমাবর্তনস্থলে উপস্থিত হন। জাতীয় সংগীতের
মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু ও শেষ হয়।
এ ছাড়া ছিল ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ
এবং নৃত্যকলা বিভাগের আয়োজনে নৃত্য পরিবেশিত হয়।

No comments:
Post a Comment